পাখীর কিছু রোগের মধ্যে খুবই সাধারন অথচ খারাপ আরেকটি রোগ হল। বায়ুপূর্ণ খাদ্যথলি ও বায়ু কোষের বিস্ফোরণ। বায়ু থলির( AIR SAC) মধ্যে ফুসফুসের বর্ধিত অঙ্গ হিসাবে অথবা বলা যেতে পারে শ্বাসযন্ত্রের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এই থলি ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি সরাসরি অক্সিজেন বা বায়ু বিনিময়ের বা চলাচলে সাথে সরাসরি জড়িত নয়। মুলত এটি বড় শ্বাস টিউব (tracheae) এর বন্ধ ক্ষুদ্র থলি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাখির শ্বসনতন্ত্র নয়টি থলি( AIR SAC) থাকে। তাই এটি অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীদের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। একটি পাখী যখন উচ্চতায় উড়ার সময় যখন ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। তখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এয়ার থলি গলা নিচে ও পেটে উপরের অংশে অবস্থিত হয়।
কারনঃ
কোন প্রকার সংক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে যখন বায়ু কোষ থেকে বাতাস/বায়ু লিক হতে বা ফিরে যেতে পারে না। তখন এর চামড়ার উপর স্তূপাকার জমা হতে থাকে। আর এই সময় এই বায়ু/বাতাস কে মুক্তি না দিলে এটি সম্প্রসারিত হয়ে বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। এমন কি এই থলি বিস্ফোরিত হয়ে বা শ্বাস বন্ধ হয়ে পাখীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। মাইকোপ্লাজ়মা গ্যালিসেপটিকাম অণুজীবের একটি গ্রুপ এই সংক্রমনের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। এটি পাখিসহ অনেক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। এটি প্রথমে উচ্চ শ্বাস নালী আক্রান্ত হয় ও বাচ্চা অবস্থায় এই অণুজীব দ্বারা অধ্যুষিত বা পরিপুরন হয়ে অন্য শ্বাস তন্ত্রে আক্রান্ত হয়। আর এটি একবার আক্রান্ত হলে তাদের কে চিরতরে নির্মূল করা মূলত প্রায় অসম্ভব। তবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ এর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা হ্রাস করা যায়। সাধারণত এই অবস্থায় সংক্রমিত পাখী জন্য কর্মক্ষমতা কমে যায়। বিশেষজ্ঞ গন মনে করেন যে, অপর্যাপ্ত পুষ্টি, খামারের বিষাক্ত গ্যাস, ইদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা, রাসায়নিক পদার্থ যেমন-খাচার বা দেয়ালের রঙ বা বিষাক্ত কীটনাশক ইত্যাদি কারনের এটি হয়ে থাকে। অনেক সময় বাচ্চাদের কে হ্যান্ড ফীডিং করানোর সময় ফিডার মধ্যে অতিরিক্ত বাতাস কর্প এর মধ্যে গেলেও এই বিপত্তি দেখা দিতে পারে। এটি বয়স্ক পাকির থেকে চেয়ে বাচ্চা পাখী বেশী সংক্রমিত হতে দেখা যায়। বিশেষ করে ১-১৫ দিনের ৯৫% বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ বেশী দেখা যায়। তবে বড়দের সংক্রমনের পরিমান ৫% এর বেশী নয়।
লক্ষনঃ
১) কর্প এর চামড়া সচ্ছ ও বাতাস পূর্ণ দেখা যাবে ও এটি ফুলতে থাকে ও একসময় বাচ্চাটি নড়াচড়া করার মত অবস্থা থাকে না।
২) বড়দের ক্ষেত্রে খাবার বা পানি দিবার মত জায়গা থাকে না। খাবার নাক মুখ দিয়ে খাবার ও পানি বের হয়ে আসে।
৩) বড়দের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে বুঝতে হবে। যে তাতে পানি না বাতাস আছে। অনেক সময় রোগের কারনে খাবার ও পানি জমে থাকে সেটি এই রোগের মধ্যে পড়ে না।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ
১) এই রোগে প্রাথমিক চিকিৎসা আগে দিতে হয় আর এই পর্যায়ে একটি সূচ এর অগ্রভাগ দিয়ে কর্প এর দুইটি জায়গা অল্প ফুটা করে দিয়ে হালকা চাপ প্রয়োগ করে বাতাস বের করার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। এটি কিছুখনের মধ্যে আবার বাতাস পূর্ণ হয়ে যায় তাই কয়েকবার এই কাজটি করতে হতে পারে।
২) বাতাস বের করার পর পরই কুসুম গরম রাইস স্যালাইন খাওয়াতে পারেন অথবা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ২-৩ ফোঁটা ১-২ সিসি পানিতে দিয়ে অল্প পরিমান খাওয়াতে পারেন। বেশী ছোট বাচ্চা হলে ফোঁটা ফোঁটা করে আর বড় হলে ১-২ সিসি/মিলি পর্যন্ত দিতে পারেন।
৩) কর্প এর ফুটা করা অংশ তেপ বা লিউকোপ্লাস দিয়ে এটে দিতে পারেন বা অ্যান্টিসেপটিকও লাগাতে পারেন। পাখী কে উষ্ণ জায়গাতে রাখবেন ও উষ্ণ রাখার চেষ্টা করবেন। কারন এই অবস্থায় শরীর আসতে আসতে ঠাণ্ডা হয়ে আসতে থাকে।
৪) মানুষের ঔষধ (Milk of Magnesia) ৫-৬ ফোঁটা করে দেতে পারেন এটি খুব ভাল কাজ করে থাকে।
৫) পেটে যদি খাবার জমে থাকে আর এই অবস্থা হয় তাহলে আগে ১-২ মিলি/সিসি কুসুম গরম পানিতে ২-৩ ফোটা অ্যাপেল সিডার মিক্স করে ফোটা ফোটা করে ৩-৪ ফোটা খাওয়াবেন। এর পর হালকা আঙ্গুলের সাহায্যে একটু মর্দন করে দিবেন।
৬) Doxi vet একটি ম্যাচের কাঠির বারুদের উল্টা দিকে যে পরিমান উঠে সেই পরিমান ১ মিলি পানিতে মিক্স করে ফোটা ফোটা করে খাওয়াতে পারেন।
৭) প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভাল মানের পরিষ্কার খাবার দিবেন। ১৫ দিন পর পর অ্যাপেল সিডার দিবেন ১ মিলি/সিসি ১ লিটার বিশুদ্ধ পানিতে মিক্স করে। সাধারণ খাবার পানি হিসাবে সরবরাহ করবেন। খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। জীবাণু নাশক স্প্রে করবেন নিয়মিত। বি কমপ্লেক্স দিবেন।
সতর্কতাঃ
১) খেয়াল রাখতে হবে অনেকেই বেশী চাপ প্রয়োগ করে মুখ দিয়ে বাতাস বের করার চেষ্টা করেন। এটি খুবই মারাত্মক কারন এতে বায়ু কোষ বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
২) সূচ দিয়ে ফুটা করার সময় বেশী জ্বরে বা গভিরে সূচ ফুটাবেন এতে রক্ত বের হয়ে বিপত্তি ঘটে পারে।
৩) অনেকেই অ্যাপেল সিদার ঘন ঘন ও বেশী পরিমানে ব্যাবহার করে থাকেন যেটা পাখীর ইমিউন সিস্টেম কে পুড়িয়ে দেয় ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনি কত ভাল পাখী প্রেমী তা নির্ভর করে আপনার সাধারন জ্ঞানের উপর। একটা ব্যাপার সব সময় খেয়াল রাখবেন, বেশী মায়া মমতা ও ভালবাসা বিপত্তি সৃষ্টি করে। তাই যখন যা করণীয় তখন সেটাই করার চেষ্টা করবেন।
মুল লেখক- Kf SohelRabbi ( কবুতর ও পাখি বিশেষজ্ঞ)