পাখিদের সাধারনত রোগ জীবণুতে আক্রান্ত কম আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আর খাঁচায় পোষা পাখির রোগ বালাই একবারেই কম হয়ে থাকে। পোষা বা খাঁচার পাখি সময়মতো সুষম খাবার খেয়ে থাকে, এদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা থেকে সহজেই রক্ষা করা যায় বলে পাখি কম অসুস্থ হয়।
পাখির অসুস্থতার লক্ষণ প্রথমদিকে প্রকাশ পায় না। রোগের মাত্রা বেশী হলে এবং দূর্বলতার প্রকোপ বেড়ে গেলে তাদের রোগ আমাদের নজরে আসে। এজন্য পাখিদের প্রতি সর্বদা বিশেষ নজর রাখতে হয়।
যেভাবে রোগজীবাণু আক্রমণ করে থাকে-
১। মানুষ
ক) পাখির কিছু কিছু রোগ মানুষের সংস্পর্শে আসলে হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- Candia, E. Coli, Salmonella ইত্যাদি।
খ) এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মানুষের জামাকাপড়, জুতো, চুল এসবের মাধ্যমে রোগের জীবাণু পাখির দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে- Pachecos virsus, Psittacosis ইত্যাদি।
২। পাখির জন্য ব্যবহৃত নোংরা জিনিস থেকে
ক) যদি পাখির খাঁচার মধ্যে দীর্ঘদিন কোন নোংরা জিনিস থেকে থাকে অথবা নোংরা কোন জিনিস ব্যবহার করলে।
খ) পাখির পরিত্যক্ত খাবার বা পানির পাত্র, পাখির বাসা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত ঝাটা, পোকা দমন করার জন্য ব্যবহৃত spraygun, বাচ্চা তোলার জন্য ব্যবহৃত পাত্র ইত্যাদি থেকে রোগের জীবাণু পাখিকে আক্রমণ করতে পারে।
গ) এসব জিনিসে যদি জীবাণু থেকে থাকে তবে উক্ত জীবাণু কয়েক মাস পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।
৩। নতুন করে কিনে আনা পাখি থেকে
ক) অনেক সময় দেখা যায় যে বাড়িতে আনা নতুন পাখির মাধ্যমেও রোগ জীবাণু সংক্রমণ হয়ে থাকে।
খ) প্রাথমিক পর্যায় বাহির থেকে আনা নতুন পাখির শরীরে রোগের জীবাণু আছে কি না তা বুঝা যায় না বা সহজে ধরা পড়ে না। কিন্তু উক্ত রোগের জীবাণু অন্য পাখিকে আক্রমণ করতে পারে।
গ) তাই নতুন পাখি কিনলেই তাঁকে জীবাণুমুক্ত করে অর্থাৎ Quarantine করে তবেই অন্যান্য পাখির সঙ্গে রাখতে হবে।
৪। পেস্ট (Pests)
ক) Pests কথাটির অর্থ হল যা রোগের সৃষ্টি করে। প্রকৃতিতে থাকা বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর মাধমে রোগের আক্রমণ হতে পারে।
খ) এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে, ইঁদুর, মাছি, পোকা, অথবা পাখির মধ্যে রয়েছে কাক, চড়াই, ঘুঘু ইত্যাদির মাধ্যমে পোষা পাখিকে রোগ জীবাণু আক্রমণ করতে পারে।
গ) উক্ত প্রাণীগুলো সাধারনত নিজেরা রোগের জীবাণু বহন করে কিন্তু তাঁদের কোনপ্রকার রোগ হয় না। তাই এদের মাধ্যমে যেন আপনার পোষা পাখির রোগ ছড়াতে না পারে, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।
৫। বাহ্যিক চাপ / প্রচন্ড ভয় পাওয়া (Stress)
ক) অনেক সময় দেখা যায় যে পাখি অত্যাধিক ভয় পেলে তা পাখির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পাখি যখন প্রচণ্ড ভয় পায় তখন তাঁর শরীরের রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়।
খ) আবার দেখা যায় পাখি শরীরের ভেতরে কোন রোগ থাকতে পারে কিন্তু তা বাইর থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু পাখি যখন অত্যাধিক ভয় পায় তখন উক্ত রোগের জীবাণু সক্রিয় হয়ে থাকে।
পাখির রোগ প্রতিরোধ করার উপায়সমূহ
ক) পাখির ঘরে বাইরের কোন মানুষকে সবসময় ঢুকতে দেয়া যাবে না। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে তাঁকে বাইরে জুতো ও মোজা খুলে প্রবেশ করানো উচিৎ।
খ) মনে রাখবেন পাখির ঘরে কখনই একত্রে বেশি মানুষ প্রবেশ করা উচিৎ নয়। বিশেষকরে পাখি যখন প্রজনন চলাকালীন অবস্থায় থাকে।
গ) পাখির খাঁচায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন খাবারের পাত্র, পানির পাত্র ইত্যাদি সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানিতে লবণ বেশী করে বা পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দিয়ে ধোঁয়া উচিৎ।
ঘ) যখন পাখির প্রজনন কাল শেষ হয়ে যাবে তখন পাখির ব্যবহৃত কলস বা হাঁড়ি বা বাক্স ভাল করে লবণ গুঁড়ো বা Disinfectant দিয়ে পরিষ্কার করে ভালো করে রোদে শুকাতে হবে।
ঙ) বর্ষাকালে পাখির খাঁচা সর্বদা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
চ) পাখির খাঁচা বা তাঁর আশপাশ থেকে ইঁদুর, মাছি, টিকটিকি, পোকা ইত্যাদি দূর করতে হবে।
ছ) পাখির ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাখির ঘরে যেন সবসময় আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সংকলনে- মোঃ শাহিন মিয়া