মাইটস সমাচার

* মাইটস এভিয়ারির যেকোন পাখির হতে পারে। এই পোকা উন্মুত পরিবেশের পাখি বা এক এভিয়ারির পাখি থেকে অন্য এভিয়ারিতে ছড়ায়, খামারির মাধ্যমেও ছড়াতেও পারে। এই রক্ত খেকো মাইটস পাখির রক্ত খেয়ে বাঁচে আর মৃত্যু পর্যন্ত সাথে থাকে। পাখির ঘরে কাজ করতে গেলে এরা মানুষকেও ছাড়েনা। ঘাড়ে, মাথায়, বগলে ও শরিররের বিভিন্ন স্থানে কামড়াতে থাকে।
কিছু লক্ষণ :
১। এলোমেলো করে থাকা পালক ২। অতিরিক্ত চুলকানো ৩। চামড়া চুলকানো ৪। অতিরিক্ত পালক ঝড়া ৫। চোখের খোলা জাগায় পালক না থাকা আর লাল ক্ষত ৬। মলদ্বারে ক্ষত ও চারপাশ পালক বিহিন থাকা ৭। রাতের অন্ধকারে বিরামহিন অতিরিক্ত ছটফট করা ৮। ঠোঁটের কোণা থেকে পালক উঠে আসা ৯। পায়ের নখ বড় হতে থাকা ১০। পায়ের চামড়া উসকো খুসকো হতে থাকা ১১। হা করে নিশ্বাস নেয়া, লেজ লাফানো ১২। পাখির ঘরে কাজ করার পর গায়ে বিরবির করে কিছু হাটছে অনুভব করা ১৩। রাতে সাদা কাপড় দিয়ে কেইজ ঢেকে রেখে লাইট অফ করার ঘণ্টা খানেক পর কাপড়ে ক্ষুদ্র কালো বা লাল পোকা দেখা গেলেও বুঝা যাবে মাইটস আছে এভিয়ারিতে। ইত্যাদি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন আপনার এভিয়ারি মাইটস দ্বারা আক্রান্ত। আর এ অবস্থায় যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে নইলে অল্প বয়সের পাখিদের এমিনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।
প্রতিরোধের উপায় :
১। এভিয়ারিতে বাইরের উন্মুক্ত কোন পাখি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ২। পাখির খাবারের পাত্র আর পানির পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। পানি ও খাবারের পাত্র এর রাখার স্থান পরিবর্তন করতে হবে। ৩। নিম পাতার পানি বা এসিভি মিশ্রিত পানি দিয়ে এভিয়ারি স্প্রে করতে হবে। ৪। খাঁচা, হাড়ি পরিষ্কার করে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। ভালো হয় হাড়ি বদলে PVC ব্রিডিং বক্স ব্যাবহার করা। ৫। গোসলের পানিতে এসিভি দেয়া যায়। ৬। তিন সপ্তাহের মধ্যে এই মাইটস রক্ত না খেলে মারা যায় তাই আপনাকে এই তিন সপ্তাহ অনেক সজাগ থাকতে হবে যেন কোনভাবেই অপরিষ্কার কিছু না থাকে, কোন কিছু এমন থাকলে যার নিচে মাইটস দিনে লুকাতে পারে তা তৎক্ষণাৎ বের করে পরিষ্কার করতে হবে। ৭। পাখির পারচ পরিষ্কার করে নিশ্ছিদ্র পারচ দিতে হবে। ৮। ছোট বেবি আক্রান্ত হলে তাদের হাড়িতে সাদা টিস্যু রেখে আধা ঘণ্টা পরপর টিস্যু চেক করে পোকা মেরে ফেলতে হবে। ভালো হয় আলাদা কোন স্থানে রেখে হয়ান্ড ফিড করাতে পারলে। এতে আরও ভালো করে পোকা চেক করা যাবে। ৯। এসিমেক১% - ১লি. খাবার পানিতে ১এম এল দিতে হবে আবার ২১ দিন পর একিভাবে ব্যবহার করতে হবে, এভাবে প্রতি দুই মাস পরপর ব্যবহার করা যায়, অন্যথায় পাখির ঘাড় বা রানে ১ ফোঁটা করে দিতে হবে ২ মাসে ১ দিন।
প্রতিকার : প্রতিরোধ ব্যাবস্থা না নিলে অথবা দূর্ঘটনা বশতঃ যদি মাইটস্ আক্রমন হয়ে যায় তখন প্রতিকার নিন্মরূপ :-
পাখির দেহে ৩ ধরনের মাইটস হতে পারে
১। ফেদার মাইটস
২। স্কেলি মাইটস
৩। এয়ার স্যাক মাইটস
📷
১। ফেদার মাইটস
ক) বড় পাখির মাধ্যমে বাচ্চা পাখিরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। খ) বাচ্চা পাখির যখন পালক গজায় তখন পালকর গোড়ার রক্ত শুষে নেয়। ফলে বাচ্চা পাখির লেজ এবং ডানার অধিকাংশ পালক ঝড়ে পড়ে। গ) যে পালগুলি এখনও পড়ে নাই, সেগুলির গোড়া একদম কালো হয়ে গেছে। ঘ) বড় পাখির অনেক সময় গা চুলকাতে দেখা যায়।
চিকিৎসা :
এই ক্ষেত্রে বাচ্চা ও বড় সব পাখিকে চিকিৎসা করাতে হবে।বড় পাখিদের মাথার পেছনে এক ফোটা করে Acimec অথবা Ivermec তিনদিন পরপর তিন বার দিলে মাইটস মুক্ত হবে। বাচ্চা পাখিদের ভালো করতে হলে ডানা ও লেজের গোড়ায় Acimec 1% তিনদিন পর পর সাতবার স্প্রে করলেই মাইটস মুক্ত হবে। বাচ্চা পাখিদের যেহেতু পালক পড়ে যায়,কাজেই এদেরCalfast + Ozinc এক লিটার পানিতে 2.5 + 1 = 3.5 ml পাঁচদিন খাওয়াতে হবে। সাথে বায়োটিন (B7) এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। যেমন – গাজর কুচি (ক্যারোটিন); গাঢ় সবুজ শাক (ক্যারোটিন); ব্রোকলি (ক্যারোটিন); সবজিডিমের সাদা অংশ (বায়োটিন); গমের স্প্রাউট (বায়োটিন); টাটকা সবুজ ফল (বায়োটিন)।
📷
২। স্কেলি মাইটস
প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা এই পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয়।এই ক্ষেত্রে পা,ঠোঁট ও মুখের চারিদিকে সাদা সাদা স্কেল তৈরী হয়। বেশীদিন হয়ে গেলে পা ও ঠোঁট একটু চাপ লাগলেই ভেঙে যেতে পারে।
চিকিৎসা :
এই ক্ষেত্রে যেহেতু পা ও ঠোঁটের ভিতরে পরজীবি পোকা থাকে কাজেই এদের শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ করতে পারলেই মাইটস মারা যাবে।সেজন্য ভেসলিন বা নারিকেল তেল পর পর তিনদিন আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে লাগালে মাইটস মারা গিয়ে পা বা ঠোঁট আগের মত হয়ে যাবে।
📷
এয়ারস্যাক মাইটসঃ লক্ষন :
তিন ধরনের মাইটসের মধ্যে এরা সবচেয়ে মারাত্মক।এরা পাখির শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে।রোগের লক্ষণ দেখে অনেকেই বলে শ্বাস নালীর প্রবাহ,শ্বাসকষ্ট, গলা দিয়ে গড়গড় শব্দ হয়,লেজ নড়তে থাকে যাকে টেল ববিং বলে।চোখের চারিদিকে ভেজা ভেজা দেখা যাবে কিন্তু সহজেই ভালো হবেনা।পাখি আস্তে আস্তে শুকাতে থাকবে এবং দুই-তিন মাসের মধ্যে হঠাৎ মারা যাবে।
চিকিৎসাঃ এই ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
প্রথম সপ্তাহে : Liva-vit ১ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ২ দিন। Rob marshall s76 ৫ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ৩ দিন। সপ্তাহের বাকীদিন গুলি ফ্রেশ পানি দিবেন।
দ্বিতীয় সপ্তাহে : Liva-vit ১ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ২ দিন। Rob marshall s76 ৫ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ২ দিন। সপ্তাহের বাকীদিন গুলি ফ্রেশ পানি দিবেন।
তৃতীয় সপ্তাহে : Liva-vit ১ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ২ দিন। Rob marshall s76 ৫ মিলি ১ লিটার পানির অনুপাতে ২ দিন। সপ্তাহের বাকীদিন গুলি ফ্রেশ পানি দিবেন। এবার পর্যবেক্ষন করুন তিন সপ্তাহ আগের পাখি এবং ঔষধ দেওয়ার পর পাখির অবস্থা।
Source internet
Previous Post Next Post

Contact Form